বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

১৩ দফা দাবীর ব্যাখ্যা : আল্লামা আহমদ শফী

১৩ দফা দাবীর ব্যাখ্যা : আল্লামা আহমদ শফী

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মহান আল্লাহ পাক আমাকে আপনাকে ইহজগতে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এর পাশাপাশি মানবজাতিকে সকল সৃষ্টি জগতের উপরে সর্বোত্তম মর্যাদা দান (আশরাফুল মাখলুকাত) করেছেন। মানুষের বৈশিষ্ট্যই হল প্রতিপালকের নির্দেশনা মতে নিজের জীবন গড়ে তোলা। আজ বিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ চন্দ্রজয় করেছেগ্রহ-নক্ষত্র আবিষ্কার করেছেরকেট, বোয়িং থেকে শুরু করে এটম-হাইড্রোজেনপরমাণু শক্তি অর্জন ও কম্পিউটার আবিষ্কারসহ মানুষ সভ্যতার চরম শিখরে পদার্পনের কল্পনা করলেও বাস্তবে মানুষ নৈতিক অবক্ষয়ের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছছে। আজ মানুষ থেকে মনুষ্যত্ববোধ বিদায় নিয়েছে। মানুষ হিংস্র দানবে রূপান্তরিত হয়েছে। নিজের প্রতিপালকের পবিত্র বাণী ও নির্দেশনা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত। আজ মানবতা ও নৈতিকতার আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু মজলুম নিষ্পেষিত শোষিতদের চিৎকারশাসকদের শোষনজালেমদের জুলুমবিত্তশালীদের অত্যাচারে যেন জমিন ফেটে যাবে। এই শোষণ এবং নিষ্পেষণের যাঁতাকল থেকে বিপন্ন মানবতাকে মুক্তির দিশা দিতে যুগযুগ ধরে প্রতীক্ষার পর মুসলিম জনসাধারণের ঈমান-আকীদতাহযীব-তামাদ্দুন হেফাজতের লক্ষ্যে এদেশের সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম নিজেদের ওপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব পূরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী এশিয়ার বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সম্মানিত পরিচালক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গআলেমেদ্বীনহযরত মাদানী রহ.-এর সুযোগ্য খলীফা শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব (দামাত বারাকাতুহুম) এর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করেন।

সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা : দাড়িটুপি দেখলেই পিটুনি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি



পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা : দাড়িটুপি দেখলেই পিটুনি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি

পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় গতকাল ওলামা-মাশায়েখ ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওলামা-মাশায়েখরা যখন আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে মিছিল করছিলেন ঠিক তখনি সকাল সোয়া ৯টায় পুলিশ ও র্যাব সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। সরকারি দলের ক্যাডাররা ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো লাঠিপেটা করে অনেককে অর্ধমৃত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে, কারও মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। পিচঢালা কালো রাস্তার অনেক স্থান তৌহিদী জনতার রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে মাদরাসা শিক্ষক কেউ রেহাই পাননি এ নৃশংসতা থেকে। আশপাশের বাড়ি ও দোকানে ঢুকে দাড়িটুপিধারী লোকদের বেধড়ক পেটায় তারা। ময়লার সুয়ারেজ-নর্দমায় ঝাঁপ দিয়ে কিংবা ঝোপঝাড়ে পালিয়েও রেহাই পাননি তারা। তাদের ধরে এনে বেধড়ক পিটুনির পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। হামলার পর ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই লাঠি উঁচিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তবে এ হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিকামী জনগণ হরতালকারীদের হটিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশৃঙ্খলা চায় না। তাই তারা পিকেটারদের রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কারও ওপর হামলা চালালে সেটা শান্তির জন্য ইতিবাচক কিনা সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে এ পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘জনগণ যেটা চেয়েছে, সেটা করেছে। এটা নিয়ে আপনারা বাড়াবাড়ি করছেন কেন?’
সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ এবং কোরআনবিরোধী শিক্ষা ও নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল সারাদেশে গতকাল সকাল ৬টা থেকে লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। একই দাবিতে পৃথকভাবে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
হরতাল সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের প্রকাশ্য ছত্রছায়ায় এলাকার ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সিংড়াইল শাখার সভাপতি নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে হরতাল সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রথমে রাস্তায় জিকির মিছিল করলেও পুলিশি বাধা পেয়ে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। সমাবেশ শেষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতাল সমর্থকরা চিটাগাং রোডের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে চিটাগাং রোড এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। পৌনে ৯টার দিকে ইসলামিক দলগুলোর মিছিল চিটাগাং রোডে পৌঁছলে হরতালবিরোধী মিছিলের মুখোমুখি হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রথমে সরকারি দলের ক্যাডাররা ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়।
ওলামা-মাশায়েখরা আবার রাস্তায় বসে জিকির-মিছিল করছিলেন। ঠিক তখনি পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ আর স্থানীয় সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সামনে লাঠি, ধারালো অস্ত্রসহ সরকারদলীয় ক্যাডাররা আর পেছনে কয়েকশ’ পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে হরতাল সমর্থকরা পিছু হটে। হামলার তোপে টিকতে না পেরে তারা সড়ক ছেড়ে আশপাশ এলাকার বাড়ি ও ঝোপঝাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অনেকে পাশের ময়লার সুয়ারেজে লাফিয়ে পড়ে। তাদের ওপরও হামলা চলতে থাকে।
শ্রমিকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। টিনশেড ঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতের শব্দে শিশু-নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পুরুষ সদস্যরা বাইরে বের হলে দাড়িটুপিধারীদের ওপর হামলা চালায় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ঝোপঝাড়, ঘর, অলিগলি থেকে দাড়িটুপিধারীদের ধরে এনে গণপিটুনি দেয় তারা। ২৮ অক্টোবরের মতো একজনের ওপর ১০/১২ জন মিলে হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত মাদরাস ছাত্র ও শিক্ষকদের পুলিশ ও র্যাবের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে তোফায়েল (২২) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তোফায়েল মাদানীনগর মাদরাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঞ্জাবি তৈরির দোকানে কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক অধিবাসী বলেন, ‘পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি লাঠি হাতে হামলা চালায়। আধাঘন্টা আগে মূল সড়কে দুটি মিছিল দেখে এসেছি। বাসায় ফিরে খেতে বসেছি। এরমধ্যে মানুষের চিত্কার শুনে বাইরে এসে দেখি কিছু হুজুর দৌড়ে বাসার দিকে ঢুকছেন। পেছনে লাঠি নিয়ে তাদের তাড়ানো হচ্ছে। দাড়িটুপিধারী কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়েছে তারা।’

সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১১

বোরকা পরার "অপরাধে" আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত তিন মুসলিম মহিলার কাহিনীঃ

বোরকা পরার "অপরাধে" আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত তিন মুসলিম মহিলার কাহিনীঃ ধারাবাহিক-১


আমরা বলব তিন জন মুসলিম মহিলার কথা। বলব তাদের জীবনের ২০ দিনের বিভীষিকাময় এক ঘটনার কথা। ৯০% এর বেশী মুসলমানের দেশে পর্দা করার কারণে তাদের জীবনে নেমে এসেছিল ভয়াবহ এক নির্যাতন। বলব সেই কাহিনী ধারাবাহিক ভাবে। থাকবে জাতীয় দৈনিকের রেফারেন্স।
তাদের নামঃ
১। ফৌজিয়া আক্তার- ছাত্রী, অ্যাকাউন্টিং বিভাগ ১ম বর্ষ, পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ
২। তানিয়া আক্তার- পিরোজপুরের একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা
৩। জেসমিন নাহার-ছাত্রী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স ১ম বর্ষ।

৩ জুলাই ২০০৯ইং - ঘটনার শুরুঃ- পর্দানশীল ৩জন মহিলাকে ছাত্রলীগ নামধারী বখাটেদের নির্দেশে আটক
ফৌজিয়া আক্তার ও তানিয়া আক্তার তাদের বান্ধবী জেসমিন নাহারের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তারা পিরোজপুর থেকে বাসে উঠে বালিপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামেন। জেসমিন নাহার তাদের এগিয়ে নিতে বাসস্ট্যান্ডে আসেন। তারা তিন জনই হিজাব পরিহিতা ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন বখাটে যুবক তাদের উত্ত্যক্ত করে এবং তারা তানিয়া আক্তারের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। বখাটে যুবকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা স্থানীয় বালিপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসার ভেতরে আশ্রায় নেয় এবং ঘটনা জেসমিন নাহার ও ফৌজিয়া আক্তার মোবাইল ফোনে তাদের আত্মীয়স্বজনদের জানান। তখন বখাটে যুবকরা নিজেদের বাঁচাতে এবং মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফোন করে জিয়ানগর থানায় জানায়। এলাকবাসীর কাছে বখাটে হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ফোন পেয়ে ছুটল পুলিশ। গ্রেফতার করল তানিয়া, ফৌজিয়া ও জেসমিনকে। তাদেরকে তল্লাশি করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও তাদের গ্রেফতার করা হয়। অর্থাৎ বোরকা পরার "অপরাধে" তিন জন মহিলার বিভীষিকাময় ২০ দিনের কাহিনীর শুরু!

৪ জুলাই ২০০৯ইং- বিশিষ্ট আলেমদের প্রতিবাদ
পিরোজপুরে পর্দানশীল মহিলাদের হয়রানির প্রতিবাদ বিশিষ্ট আলেমদের- আটকদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি
দেশের বিশিষ্ট আলেমগণ এঘটনার প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন বোরকা পরা ধার্মিক পর্দানশীল নিরীহ মহিলাদের অযথা হয়রানি ও অপমানিত করার জন্যই সরকারি দলের বখাটে যুবকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা অবিলম্বে এদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন।

৫ জুলাই ২০০৯ইং- অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া যায়নি তারপরও মামলা এবং জামিন নামঞ্জুর বান্ধবীরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে জিয়ানগরের ৩ ছাত্রী হাজতে জামিন নামঞ্জুর
শেখ মুনির, আফজাল, হিরণ সহ ছাত্রলীগের যে বখাটে গুলোর নির্দেশে পুলিশ ওই ৩ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন রকম অভিযোগ আছে। তাদের নির্দেশেই পুলিশ বোরকা পরিহিত ৩ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে।

৯ জুলাই ২০০৯ইং- কোন অভিযোগ নেই, তারপরও পুলিশের রিমান্ডের আবেদন!
জিয়ানগরে আটক ৩ তরুণীর রিমান্ডের আবেদন প্রত্যাখ্যান : শুনানি ১৪ জুলাই
একটি রাজনৈতিক দলের মদদে পিরোজপুরের জিয়ানগরের ছাত্রলীগের বখাটে যুবকের প্ররোচনায় হয়রানি করতে আটক তিন তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিয়ানগর থানা পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত আগামী ১৪ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের কথামতো জিয়ানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক তরুণীদের বোরখার নেকাব খুলতে বাধ্য করেন। পুলিশ তাদের বোরখা খুলে আদালতে সোপর্দ করে। অর্থাৎ ১৪ জুলাইয়ের আগে তাদের আর কারাগার থেকে বের হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।

বাংলাদেশে নিয়মিত নারী নির্যাতিত হচ্ছে। পুলিশ সহ সুশীল সমাজ যদি খবর পেয়ে থাকে তখন সবাই নির্যাতিত মহিলার পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু এ ঘটনায় দেখা গেল ব্যাতিক্রম। সেই ব্যাতিক্রম করার কারণ হলো এই মহিলা গুলো ছিল "পর্দা বা বোরকা পরা"। এদের নিয়ে আরো বিচিত্র আরো নির্মম আচরণ পুলিশ ও আওয়ামী লীগ করেছে....

বোরকা পরার "অপরাধে" আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত তিন মুসলিম মহিলার কাহিনীঃ ধারাবাহিক-২

বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

'বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম' বাদ পড়বে।

ঢাকা, ফেব্র"য়ারি ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সংবিধানে ১৯৭২ সালের 'প্রস্তাবনা' ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করবে সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটি। এর ফলে সংবিধান থেকে 'বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম' বাদ পড়বেসেক্ষেত্রে 'বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম', 'দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে' ও 'সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস'- এই কথাগুলো সংবিধানে থাকবে না।

মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা


ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা

রাসূল (সাঃ) এর তারুণ্যদীপ্ত যৌবনকালও সর্বোত্তম আদর্শের নমুনা হিসেবে সমুজ্জল। তারুণ্যের তারনায় যৌবনে নানা রকম উচ্ছৃংখলতার ছাপ পড়ে। সমাজে প্রবাহমান কোন না কোন খারাপ প্রভাব যুব চরিত্রে রেখাপাত করে থাকে। রাসূল (সাঃ) এর যৌবনকাল ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্মল। তৎকালীন সমাজের কোন অনাচার, অনিয়ম ও অশ্লীলতার প্রভাব তার চরিত্রে পড়েনি। বরং তিনি সমাজের তখনকার খারাপ চিত্র দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন। মানুষ সমাজের কল্যাণ সেবা চিন্তায় অধীর হয়ে ওঠেন। বিশ বছর বয়সে তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেবামূলক সংস্থা হিলফুল ফুযুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার মাধ্যমেই তিনি যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে সমাজে অসহায় এতিম বিধবাদের সহায়তা দান ও অন্যায় অবিচার থেকে রক্ষা করতে ব্রতী হন। অভাবী মানুষের অভাব পূরণ এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সেবা করাই ছিল এ সংস্থার উদ্দেশ। বর্তমান বিশ্বের হতাশাগ্রস্ত অধঃপতিত যুব সমাজ রাসূল (সাঃ) এর হিলফুল ফুযুল থেকে অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, পারে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগের প্রেরণা গ্রহণ করতে। আজকের যুব সমাজ সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মাদকাসক্তি, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজ যদি রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করে তাহলে সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের পক্ষে শান্তির সমাজ গড়া সম্ভব হবে। সুতরাং আমাদের যুব সমাজকে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ও আত্মঃসংবরণশীল হওয়া এক মহৎ গুণ। ধৈর্যের মহত্ত্বতার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ প্রদান করে বলেন, অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ কর, যেমন ধৈর্য ধারণ করেছেন প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। (সুরা আহকাফ: ৩৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন, এমনকি ধৈর্যধারণ তাঁর অনন্য ও সুমহান চরিত্রে মূর্তমান হয়েছে। তিনি রেসালতের দায়িত্ব পালনের স্বার্থে দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথে দীর্ঘ তেইশ বছর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিচলিত কিংবা ক্ষোভের বশবর্তী হননি। যেমন কোরাইশ কর্তৃক তাঁকে প্রহার, তাঁর উপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়া, আবু তালেব উপত্যকায় তিন বছর পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা; তাঁর প্রতি অধিকাংশ লোকের বৈরী আচরণ; জাদুকর, গণক ও পাগল-ইত্যাদি অবমাননামূলক নামে আখ্যায়িত করা, হিজরতের রাতে হত্যার প্রয়াস, মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে কোরাইশদের সৈন্য-প্রস্তুতি, মদিনায় তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, পরস্পর সমঝোতা সম্পাদিত চুক্তি ইহুদি কর্তৃক ভঙ্গ, রাসূলকে হত্যার জন্য ইহুদিদের চেষ্টা ও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ ও পরিবার-বর্গ আহারের ক্ষেত্রেও ধৈর্যধারণ করেছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো একদিনে দু'বেলা যবের রুটি পেট ভরে খাননি। এমন হত যে, দুই তিন মাস অতিবাহিত হত, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। অধিকাংশ সময় তাদের খাবার থাকতো খেজুর আর পানি।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১০

খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ

খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করল সরকার। জবরদস্তিমূলকভাবে গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতাকে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে অমানবিকভাবে টেনেহিঁচড়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বাড়িছাড়া করার সময় পরিবারের সদস্যদের গায়ে হাত দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি। ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী জরুরি সরকারের সময় যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল, একই কায়দায় মইনুল রোডের বাড়িতে হানা দিয়ে, গেট ও দরজা ভেঙে জোর করে গাড়িতে তুলে দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। সাফকবলার মাধ্যমে চিরস্থায়ীভাবে লিজ দেয়া সুদীর্ঘ ৩৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি দখল করে নেয়া হলো। গতকাল বেলা সোয়া ৩টার দিকে বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার গুলশানের অফিসে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দিনভর সংঘর্ষ, বিক্ষোভ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। গতকাল সকালে তারা মাইকিং করে খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বাড়ির কর্মচারীসহ অন্য বাসিন্দাদের। আপিল বিভাগে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় বেগম জিয়াকে হয়রানি না করার জন্য প্রধান বিচারপতির নির্দেশনাও আমলে নেয়নি সরকার। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে আইনজীবীরা মইনুল রোডে যেতে চাইলে তাদের ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক দাবি করেছেন, খালেদা জিয়া আদালতের আদেশ মেনে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। এদিকে গত সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে রাতে খালেদা জিয়া তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের গুলশানের বাসায় ওঠেন।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আগামী ২৯ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য থাকা অবস্থায় দলীয় চেয়ারপার্সনকে জোর করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ও তাকে লাঞ্ছিত অপমানিত করার প্রতিবাদে বিএনপি আজ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে। দলীয় নেত্রীকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার খবর প্রচারিত হলে গতকাল সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর ও দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে এক ডজন গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ক্যান্টনমেন্টে ঢোকার প্রবেশপথ জাহাঙ্গীর গেট ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীজুড়ে আগে থেকেই রণসজ্জায় থাকা পুলিশ বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষে কয়েকটি এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশপথ শহীদ জাহাঙ্গীর গেটেও বিএনপি নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। সেখানেও পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ হয়। ব্যবহার করা হয় জলকামান। নয়াপল্টন এলাকায় দফায় দফায় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। দেশের সবকটি জেলা ও উপজেলায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে। কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সারাদেশে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় দু’শ নেতাকর্মীকে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকারের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কারণেই খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হলো। মইনুল রোডের বাড়ির দরজা ভেঙে র্যাব-পুলিশ ঢুকে ত্রাসের সৃষ্টি করে, দুর্ব্যবহার করে এবং শেষ পর্যন্ত তার দু’হাত ধরে টেনে গাড়িতে তুলে নেয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার। সরকারের এ আচরণকে সভ্যতা, ভব্যতা, শালীনতা ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে বর্ণনা করেছেন বিএনপি নেতারা।
খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করতে সরকারি উদ্যোগ : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই বছরের ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে ১৫ দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেয় সামরিক ভূমি কর্তৃপক্ষ। এ নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া ওই বছরের ৩ মে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়তে ৭ মে আরেক দফা নোটিশ দেয়া হয়। পরে গত ২৪ মে খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়তে তৃতীয় দফায় নোটিশ দেয়া হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং নোটিশের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত বছরের ২৩ আগস্ট চার মাস ও গত ১৭ ডিসেম্বর আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৩ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন আদালত।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির লিজ বাতিল করে সামরিক ভূমি কর্তৃপক্ষের দেয়া নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেগম খালেদা জিয়ার দায়ের করা রিটটি খারিজ করে দেন। রায়ের ২৫ দিন পর গত ৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে তার কৌঁসুলিরা আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার আবেদন পেশ করেন। আবেদনে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত রাখাসহ এর বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চাওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আগামী ২৯ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
উচ্ছেদ করা হয় যেভাবে : আপিল বিভাগের বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায়ই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শহীদ মইনুল রোডে বেগম জিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। চাপ প্রয়োগ করা হয় বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য। খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনায় যাতে দলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয় সেজন্য একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার রাতেই পরিকল্পিতভাবে প্রচার করতে থাকে যে, খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন এবং কিছু মালামাল গত কয়েকদিনে স্থানান্তর করেছেন। মিডিয়াতে এ ধরনের খবর প্রচারে তত্পর হয়ে ওঠে ওই সংস্থার লোকজন। তারা কিছুটা সফলও হন। গতকাল একাধিক বহুল প্রচারিত পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়, খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন এবং মিন্টোর রোডের সরকারি বাড়িতে যাওয়ার জন্য তিনি মালামাল স্থানান্তরে সেনাপ্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ছিল তারা স্পষ্ট করে জানান, এটা পরিকল্পিত প্রচারণা। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে প্রতিবাদ না জানায় সেজন্যই এ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তবুও বহু নেতাকর্মী শুক্রবার মধ্যরাতের পর শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে জড়ো হয়ে তাদের উদ্বেগ, উত্কণ্ঠা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে খবরটিকে গুজব মনে করে ভোররাতের দিকে অনেকে ফিরে যান।
এদিকে ভোরে শহীদ মইনুল সড়কের খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে ফোর্সসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে একজন ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জোর করে খালেদা জিয়ার বাড়িতে ঢোকার প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রথমে তারা বাড়িতে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আটক করে নিয়ে যায় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। এক পর্যায়ে বেলা সোয়া ১২টার দিকে তারা খালেদা জিয়ার মূল বাসভবনের গ্রিল ও নেট কেটে তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে তিনি জানান, বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি আপিল বিভাগের বিবেচনাধীন আছে। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান খালেদা জিয়া। কিন্তু সরকারি বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে এবং তারা কোনো কথা না শুনে সাফ জানিয়ে দেয়, স্বেচ্ছায় না বের হলে জোর করে বের করে দেয়া হবে।
সরকার জোর করে খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে, এ তথ্য গতকাল ভোর থেকে প্রকাশ পেতে থাকে। খালেদা জিয়া তার বাড়ি ঘেরাও করে বের করার জন্য চাপ সৃষ্টির কথা দলের আইনজীবী নেতাদের জানান এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। মুহূর্তের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। নেতাকর্মীরা দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ক্যান্টনমেন্টের শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খালেদা জিয়ার ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়া নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের হেয়ার রোডের বাসভবনে বৈঠক করতে যান খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মওদুদ আহমদ। এর কিছু সময় পর আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, খালেদা জিয়া কয়েকদিনের প্রস্তুতি শেষে স্বেচ্ছায় ঢাকা সেনানিবাসের বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি ছাড়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আইএসপিআরের দেয়া বক্তব্যকে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে অভিহিতি করেন খালেদা জিয়া। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে নয়াপল্টন, শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী তিতুমির কলেজের সামনে এবং বিভিন্ন এলাকায়।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়ার চার আইনজীবী। এরপর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়া নিয়ে আইএসপিআরের বক্তব্য ভিত্তিহীন। তারা আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলে তাদের বিশ্বাস জন্মেছে, ২৯ নভেম্বরের শুনানির আগে খালেদা জিয়াকে ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করা হবে না। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া তিনি বাড়ি ছাড়বেন না। বেলা পৌনে ১১টায় খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাসভবন থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে তাকে সেখানে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। দুপুর ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের পর বিএনপির কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়। প্রায় একই সময় ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেটে জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে হটিয়ে দেয় পুলিশ। খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উত্খাতের প্রতিবাদে আজ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এরই মধ্যে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, মিরপুর ও গাবতলীতে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে। মহাখালী তিতুমির কলেজের সামনেও বিক্ষোভ, ভাংচুর ও সংঘর্ষ হয়। বন্ধ হয়ে যায় ওইসব এলাকায় যানবাহন চলাচল। বিশেষ করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল বিনিময় হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এদিকে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেই এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খালেদা জিয়ার স্টাডি রুমে জোর করে প্রবেশ করে এবং তার ব্যক্তিগত স্টাফদেরও আটক করে নিয়ে যায়। খালেদা জিয়া তখন বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে তারা বেডরুমের কড়া নেড়ে ১০ মিনিট সময় দিয়ে তাকে বের হয়ে আসতে বলে। অন্যথায় জোর করে তাকে উঠিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়। তারা বলে, স্বেচ্ছায় খালেদা জিয়া বেরিয়ে না এলে তাকে জোর করে বের করে আনা হবে। প্রয়োজনে পাজাকোলা করে তুলে নেয়া হবে। পরে এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খালেদা জিয়ার বেডরুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে বেলা সোয়া ৩টার দিকে সেনানিবাসে মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বেগম জিয়াকে টেনেহিঁচড়ে জোর করে গাড়িতে তুলে দেয় মহিলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
উচ্ছেদের পর গুলশানের অফিসে খালেদা জিয়া : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর পুলিশ র্যাব ও গোয়েন্দা সদস্যরা এসকট করে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের অফিসে নিয়ে যায়। জাতীয় ও বিরোধীদলীয় নেতার পতাকাশোভিত একটি সাদা জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৬১২) থেকে তিনি যখন নামেন তখন তার সঙ্গে ছিলেন তারই এক ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমেই গুলশানের অফিসের দ্বিতীয় তলায় তার কক্ষে চলে যান খালেদা জিয়া। পরে তার ব্যবহার্য কিছু জিনিস নিয়ে অপর একটি কালো রঙের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ-০২-০৯৩৭) অফিসে পৌঁছে।
খালেদা জিয়া তার সেনানিবাসের বাসভবন থেকে বের হয়ে সৈনিক ক্লাবের পাশ দিয়ে মহাখালী দিয়ে কাকলী হয়ে গুলশানের অফিসে পৌঁছান। তিনি অফিসে পৌঁছার পর কয়েকজন কর্মীকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। আবার অফিসের বাইরে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের রিবুদ্ধে স্লোগান দেয়। খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিসে যাওয়ার খবর শুনে এক এক করে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। এ সময় জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছোট দুই ভাই সাঈদ এস্কান্দর ও শামীম এস্কান্দর অফিসে যান।
ড্রাইভার আমিন যা দেখেছেন : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারই গাড়ির ড্রাইভার আমিন। গতকাল গুলশানের অফিসে যাওয়ার সময় আমার দেশকে তিনি জানিয়েছেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেনানিবাসের বাড়িতে প্রবেশ করে ম্যাডামের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। কী ধরনের আচরণ করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে তা বলার মতো নয়।
তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৬টায় প্রথমে পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে সকাল ৭টায় বাড়ির স্টাফদের আটক করে। দুপুর সোয়া ১২টায় মূল গেটের তালা ভেঙে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করে।
সিনিয়র আইনজীবীদের ব্রিফিং : প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে সিনিয়র আইনজীবীরা টিএইচ খানের চেম্বারে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। এতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। বৈঠক শেষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির মামলাটি এখনও বিচারাধীন। আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার শুনানি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মুলতবি করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসভবন ঘিরে ফেলেছে। এ বিষয়টি অবহিত করে প্রতিকারের জন্য আমরা খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়েছি। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে সুপ্রিমকোর্টের প্রচলিত প্রভিশন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। এই বলে প্রধান বিচারপতি আমাদের চার-পাঁচবার আশ্বস্ত করেছেন। প্রধান বিচারপতি এও বলেছেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হবে না। প্রধান বিচারপতি আমাদের বলেছেন, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সরকার ওই বাড়ি থেকে খালেদাকে উচ্ছেদ করবে না। প্রধান বিচারপতির আশ্বাসে আমরা চলে এসেছি। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকসহ অন্যদের সামনে প্রধান বিচারপতি যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা অবশ্যই পালিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু আমাদের কাছে খবর এসেছে দরজা ভেঙে খালেদা জিয়াকে বের করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এটা হলে দেশে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এরই মধ্যে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়াকে হয়তো জুলুম করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বলা হবে তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছেন। শহীদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে বের করে দেয়া হলে সরকারও শান্তিতে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির এ আশ্বাসের পর আমরা কোর্টে ফিরে এসেছি। এখন শুনছি খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের জন্য তার ঘরের দরজা ভাঙা হচ্ছে। আমরা প্রধান বিচারপতির আশ্বাস সংবলিত বক্তব্য আইনজীবী সনদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আইনজীবী সনদ : প্রধান বিচারপতির আশ্বাস সংক্রান্ত এ বক্তব্য সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন লিখিতভাবে বেলা ২টার দিকে স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজির কাছে পাঠানো হয়। এ আইনজীবী সনদের একটি কপি নিয়ে বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা ক্যান্টনমেন্টে যান। আইনজীবী সনদে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকসহ সিনিয়র আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাত্ করেছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে লিভ টু আপিল নং-২৩০০ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেবে না। প্রধান বিচারপতির এ আশ্বাসের কথা ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে অবহিত করেছেন। আশা করছি, লিভ টু পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে দেবে।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ : মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেন। গতকাল ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টে জড়ো হন। তারা দফায় দফায় মিছিল করেন। দুপুরের দিকে তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে আইনজীবীরা আবার মিছিল নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের ২ নম্বর হলরুমে সমাবেশে মিলিত হন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। সমাবেশে আইনজীবীরা বলেন, সরকার সুপ্রিমকোর্ট ও প্রধান বিচারপতিকে অবজ্ঞা করে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে। এ স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। এ সময় শত শত আইনজীবী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, আমার মায়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ বলে স্লোগান দেন। টিএইচ খান বলেন, বিচারাধীন মামলায় রায় বাস্তবায়নের ঘটনা এটাই প্রথম। আমার ওকালতি জীবনে সুপ্রিমকোর্ট ও প্রধান বিচারপতিকে অবজ্ঞা করে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘটনা আর দেখিনি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতির আশ্বাস সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির দরজা ভেঙে তাকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, সরকারের কাছে প্রধান বিচারপতির কোনো মর্যাদা নেই।
রাতে ছোট ভাইয়ের বাসায় : শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার পর শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। বেগম জিয়া কোথায় উঠবেন এ নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি সোজা গিয়ে ওঠেন গুলশানের কার্যালয়ে। পরে একটি গাড়িতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সন তার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সেখান থেকে গুলশান-২ নম্বরে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দরের বাসায় উঠেছেন। শামীম ইস্কান্দার দেশের বাইরে অবস্থান করলেও বাড়িটিতে বর্তমানে তার স্ত্রী ও কয়েকজন গৃহপরিচারিকা রয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বিকালেই খালেদা জিয়ার লাগেজগুলো ওই বাড়িতেই নেয়া হয়। গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছান খালেদা জিয়া।