মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা


ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা

রাসূল (সাঃ) এর তারুণ্যদীপ্ত যৌবনকালও সর্বোত্তম আদর্শের নমুনা হিসেবে সমুজ্জল। তারুণ্যের তারনায় যৌবনে নানা রকম উচ্ছৃংখলতার ছাপ পড়ে। সমাজে প্রবাহমান কোন না কোন খারাপ প্রভাব যুব চরিত্রে রেখাপাত করে থাকে। রাসূল (সাঃ) এর যৌবনকাল ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্মল। তৎকালীন সমাজের কোন অনাচার, অনিয়ম ও অশ্লীলতার প্রভাব তার চরিত্রে পড়েনি। বরং তিনি সমাজের তখনকার খারাপ চিত্র দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন। মানুষ সমাজের কল্যাণ সেবা চিন্তায় অধীর হয়ে ওঠেন। বিশ বছর বয়সে তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেবামূলক সংস্থা হিলফুল ফুযুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার মাধ্যমেই তিনি যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে সমাজে অসহায় এতিম বিধবাদের সহায়তা দান ও অন্যায় অবিচার থেকে রক্ষা করতে ব্রতী হন। অভাবী মানুষের অভাব পূরণ এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সেবা করাই ছিল এ সংস্থার উদ্দেশ। বর্তমান বিশ্বের হতাশাগ্রস্ত অধঃপতিত যুব সমাজ রাসূল (সাঃ) এর হিলফুল ফুযুল থেকে অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, পারে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগের প্রেরণা গ্রহণ করতে। আজকের যুব সমাজ সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মাদকাসক্তি, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজ যদি রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করে তাহলে সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের পক্ষে শান্তির সমাজ গড়া সম্ভব হবে। সুতরাং আমাদের যুব সমাজকে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ও আত্মঃসংবরণশীল হওয়া এক মহৎ গুণ। ধৈর্যের মহত্ত্বতার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ প্রদান করে বলেন, অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ কর, যেমন ধৈর্য ধারণ করেছেন প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। (সুরা আহকাফ: ৩৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন, এমনকি ধৈর্যধারণ তাঁর অনন্য ও সুমহান চরিত্রে মূর্তমান হয়েছে। তিনি রেসালতের দায়িত্ব পালনের স্বার্থে দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথে দীর্ঘ তেইশ বছর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিচলিত কিংবা ক্ষোভের বশবর্তী হননি। যেমন কোরাইশ কর্তৃক তাঁকে প্রহার, তাঁর উপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়া, আবু তালেব উপত্যকায় তিন বছর পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা; তাঁর প্রতি অধিকাংশ লোকের বৈরী আচরণ; জাদুকর, গণক ও পাগল-ইত্যাদি অবমাননামূলক নামে আখ্যায়িত করা, হিজরতের রাতে হত্যার প্রয়াস, মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে কোরাইশদের সৈন্য-প্রস্তুতি, মদিনায় তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, পরস্পর সমঝোতা সম্পাদিত চুক্তি ইহুদি কর্তৃক ভঙ্গ, রাসূলকে হত্যার জন্য ইহুদিদের চেষ্টা ও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ ও পরিবার-বর্গ আহারের ক্ষেত্রেও ধৈর্যধারণ করেছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো একদিনে দু'বেলা যবের রুটি পেট ভরে খাননি। এমন হত যে, দুই তিন মাস অতিবাহিত হত, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। অধিকাংশ সময় তাদের খাবার থাকতো খেজুর আর পানি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন