সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা : দাড়িটুপি দেখলেই পিটুনি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি



পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা : দাড়িটুপি দেখলেই পিটুনি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি

পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় গতকাল ওলামা-মাশায়েখ ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওলামা-মাশায়েখরা যখন আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে মিছিল করছিলেন ঠিক তখনি সকাল সোয়া ৯টায় পুলিশ ও র্যাব সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। সরকারি দলের ক্যাডাররা ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো লাঠিপেটা করে অনেককে অর্ধমৃত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে, কারও মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। পিচঢালা কালো রাস্তার অনেক স্থান তৌহিদী জনতার রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে মাদরাসা শিক্ষক কেউ রেহাই পাননি এ নৃশংসতা থেকে। আশপাশের বাড়ি ও দোকানে ঢুকে দাড়িটুপিধারী লোকদের বেধড়ক পেটায় তারা। ময়লার সুয়ারেজ-নর্দমায় ঝাঁপ দিয়ে কিংবা ঝোপঝাড়ে পালিয়েও রেহাই পাননি তারা। তাদের ধরে এনে বেধড়ক পিটুনির পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। হামলার পর ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই লাঠি উঁচিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তবে এ হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিকামী জনগণ হরতালকারীদের হটিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশৃঙ্খলা চায় না। তাই তারা পিকেটারদের রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কারও ওপর হামলা চালালে সেটা শান্তির জন্য ইতিবাচক কিনা সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে এ পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘জনগণ যেটা চেয়েছে, সেটা করেছে। এটা নিয়ে আপনারা বাড়াবাড়ি করছেন কেন?’
সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ এবং কোরআনবিরোধী শিক্ষা ও নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল সারাদেশে গতকাল সকাল ৬টা থেকে লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। একই দাবিতে পৃথকভাবে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
হরতাল সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের প্রকাশ্য ছত্রছায়ায় এলাকার ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সিংড়াইল শাখার সভাপতি নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে হরতাল সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রথমে রাস্তায় জিকির মিছিল করলেও পুলিশি বাধা পেয়ে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। সমাবেশ শেষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতাল সমর্থকরা চিটাগাং রোডের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে চিটাগাং রোড এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। পৌনে ৯টার দিকে ইসলামিক দলগুলোর মিছিল চিটাগাং রোডে পৌঁছলে হরতালবিরোধী মিছিলের মুখোমুখি হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রথমে সরকারি দলের ক্যাডাররা ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়।
ওলামা-মাশায়েখরা আবার রাস্তায় বসে জিকির-মিছিল করছিলেন। ঠিক তখনি পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ আর স্থানীয় সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সামনে লাঠি, ধারালো অস্ত্রসহ সরকারদলীয় ক্যাডাররা আর পেছনে কয়েকশ’ পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে হরতাল সমর্থকরা পিছু হটে। হামলার তোপে টিকতে না পেরে তারা সড়ক ছেড়ে আশপাশ এলাকার বাড়ি ও ঝোপঝাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অনেকে পাশের ময়লার সুয়ারেজে লাফিয়ে পড়ে। তাদের ওপরও হামলা চলতে থাকে।
শ্রমিকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। টিনশেড ঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতের শব্দে শিশু-নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পুরুষ সদস্যরা বাইরে বের হলে দাড়িটুপিধারীদের ওপর হামলা চালায় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ঝোপঝাড়, ঘর, অলিগলি থেকে দাড়িটুপিধারীদের ধরে এনে গণপিটুনি দেয় তারা। ২৮ অক্টোবরের মতো একজনের ওপর ১০/১২ জন মিলে হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত মাদরাস ছাত্র ও শিক্ষকদের পুলিশ ও র্যাবের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে তোফায়েল (২২) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তোফায়েল মাদানীনগর মাদরাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঞ্জাবি তৈরির দোকানে কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক অধিবাসী বলেন, ‘পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি লাঠি হাতে হামলা চালায়। আধাঘন্টা আগে মূল সড়কে দুটি মিছিল দেখে এসেছি। বাসায় ফিরে খেতে বসেছি। এরমধ্যে মানুষের চিত্কার শুনে বাইরে এসে দেখি কিছু হুজুর দৌড়ে বাসার দিকে ঢুকছেন। পেছনে লাঠি নিয়ে তাদের তাড়ানো হচ্ছে। দাড়িটুপিধারী কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়েছে তারা।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন